Header Ads Widget

Responsive Advertisement

দেশে প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নারায়ণগঞ্জ হাজীগঞ্জে উদ্বোধন করলেন উপদেষ্টামণ্ডলীগন

 



১৪ জুলাই, ২০২৫ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি স্মরণে নারায়ণগঞ্জের হাজ্বীগঞ্জে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ এর শুভ উদ্বোধন করেন উপদেষ্টাগণ।



সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানাধীন হাজ্বীগঞ্জ বাইতুল নূর জামে মসজিদ নতুন  হাইওয়ে রোড সংলগ্ন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ২১ জন শহীদের নাম উল্লেখ করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়।

স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে উল্লেখ করা ২১ জন শহীদ হলেন রিয়া গোপ, মোঃ রোমান, আরমান মোল্লা, মোঃ ইরফান ভূইয়া, মোঃ তুহিন, মোঃ মোহসীন, মোঃ জনি, ইব্রাহিম, মোঃ স্বজন, মোঃ আদিল, পারভেজ হাওলাদার, মোঃ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া, সোলেমান, ইমরান হাসান, হযরত বিল্লাল, সফিকুল, মোঃ সজল, মোঃ মাবরুর হুসাইন, মোঃ মাহামুদুর রহমান খান, মোঃ সাইফুল হাসান ও আহসান কবির।

উপদেষ্টাগণ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এসময় নিহত জুলাই যোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য রাখার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়লে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তার বক্তৃতায় বলেন, একটি স্বাধীন দেশে যৌক্তিক আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। যারা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো তারা স্বপ্ন দেখেছিলো এ দেশকে বৈষম্যহীন দেখার। এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। কেনো আমাদের বিজয় আসছে, কারন যারা এবার লড়াই করেছে তারা মনের ভিতর একবিন্দু ভয়কে প্রশ্রয় দেয়নি। যখন তারা দেখেছে তাদের বন্ধুদের গুলি করা হয়ছে তখন তারা নির্বিক হয়ে গেছে। তারা নিজের বা পরিবারের চিন্তা করেনি। বিচারের জন্য দেশটাকে বৈষম্যহীন করার জন্য ঐভাবে করে আত্মত্যাগ করেছে। যদি তারা নির্বিক না হতো ও আত্মত্যাগ না করতো তাহলে আমাদের এ বিজয় আসতোনা।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদী, মুজিববাদী শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর যে সংগ্রাম চালিয়েছিলো তাতে বহু মানুষ গুম হয়ে যায়। বিচার বহিঃর্ভূত নির্বাচন ও হত্যাকান্ডের  শিকার হয়। আয়নাঘর তৈরি করা হয়েছিলো। সেই সংগ্রামের একটা পর্যায়ে বাংলার তরুন সমাজ রাস্তায় নেমে এসে সারাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে। ৩৬ দিনের সেই অগ্নিঝড়া পথ পেরিয়ে আগষ্টের ৫ তারিখে বিজয় এসেছিলো। বর্তমান সরকার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকার। গণভবনকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। আমরা সেটাকে ফ্যাসিবাদের ঠিকানা হিসেবে সংরক্ষন করতে চাই। আমরা দেখাতে চাই কিভাবে ফ্যাসিবাদীরা মানুষদের অত্যাচার, নির্যাতন করতো। এছাড়াও শহীদদের সমস্ত কবরগুলো সংরক্ষণের বিষয়েও কাজ চলছে। সবগুলো কাজ আমরা ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করতে চাই তবে আমাদের সংগ্রামের ধারা আমরা শেষ করতে পারবোনা সেটা আপনাদের কাছে দিয়ে যেতে চাই।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয় মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, গত ১৫ বছর যে স্বৈরাচারী শাসক ছিলো এই জুলাই মাসেই ৩৬ দিনে নয় মাত্র ১৫ দিনেই সেই স্বৈরাচারী শাসককে উৎখাত করে বিতাড়িত করে। আপনাদের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে, দেশে এত বড় একটি জঘন্য, নির্মম, বিভৎস হত্যাকান্ড হলো এর বিচার কোথায়। আমি আপনাদের জানাতে চাই, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেভাবে বিচার কাজ এগিয়ে চলেছে তাতে করে আমাদের এ সরকারের শাসনামলেই আমরা বিচার কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশাকরি। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার আমাকে জানিয়েছেন, ৫ আগষ্টের আগে কিছু মামলার চার্জশিট দিয়ে দিবে। চার্জশিট দেয়ার পর প্রয়োজনে আমরা দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে বিচার করবো। আমি এখানে এসে জানতে পেরেছি, মামলা করার কারনে অনেকে হয়রানীর শিকার হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বলবো এ বিষয়গুলো কঠোর নজরদারীতে রাখতে হবে।

জুলাইতে কেনো আমরা বিজয়ী হয়েছিলাম, কারন ফ্যাসিস্টদের ছাড়া সারাদেশের মানুষ একটি পরিবার হয়েগিয়েছিলাম। আমাদের সেই পরিবার, সেই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে। আমরা বৈষম্যহীন, শোষনহীন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকবে। যেখানে কোন শাসক অপশাসকে পরিণত হবেনা। আপনাদেরকে অনুরোধ করবো, বর্তমান সময়ে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, নির্মম হত্যাকান্ডের মত ঘটনা ঘটছে। যেভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে ফ্যাসিস্টদের বিতাড়িত করেছেন ঠিক সেভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে এসকল চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের রুখে দেওয়া সম্ভব।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক )মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিলুফা ইয়াসমিন,পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার,লে : কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন ১১ (অধিনায়ক) সি ইউ সিদ্ধিরগঞ্জ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন,সিভিল সার্জন ডাঃ মশিউর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ জাফর সাদিক চৌধুরী,সাদিয়া আক্তার সহকারী কমিশনার (ভূমি ) নারায়ণগঞ্জ সদর, দেবযানী কর সহকারী কমিশনার( ভূমি) সিদ্ধিরগঞ্জ , আসাদুজ্জামান নূর সরকারি কমিশনার( ভূমি) ফতুল্লা , সিদ্ধিরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহীনুর আলম, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ ,ফতুলা মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ,মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাইনুদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ সহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দ গণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ